গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করেছে পাকিস্তান। আগে ব্যাট করে ১৬৪ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বোলিংয়ে ভালো করার পর ব্যাটিংয়েও অবদান রাখলেন হাসান আলি। তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে জিতে সিরিজ ঘরে তুলল পাকিস্তান।
১৬৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৮ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের জয় লাভ করেছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রথম পুরুষ দল হিসেবে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ জয়ের রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে তারা। পুরুষ দল হিসেবে প্রথম হলেও, পাকিস্তানের আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জয়ের সেঞ্চুরি রয়েছে ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের।
এখন পর্যন্ত খেলা ১৬৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ১০০টিতেই জিতেছে পাকিস্তান, হেরেছে ৬১টি এবং পরিত্যক্ত ছিল ২টি। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৮ জয় রয়েছে ভারতের। এছাড়া পঞ্চাশের বেশি জয় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা (৭১), অস্ট্রেলিয়া (৬৯), নিউজিল্যান্ড (৬৫), ইংল্যান্ড (৬৪), শ্রীলঙ্কা (৫৯), আফগানিস্তান (৫৫) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৫৪)।টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল ৯৬টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ৩২টিতে।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একাই লড়াই করেন মিলার। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রিজা হেনড্রিকসকে বোল্ড করা মোহাম্মদ নওয়াজ পরের ওভারে ফেরান জন-জন স্মাটসকে। হাসানকে পরপর তিনটি বাউন্ডারি মেরে পরের বলে এই পেসারের দারুণ এক স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে যান পিট ফন বিলিয়োন।
অভিষিক্ত জাহিদ মাহমুদ পরপর দুই বলে ফেরান হাইনরিখ ক্লাসেনকে ও ইয়ানেমান মালানকে। ওই ওভারেই রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি খুব একটা। পরের ওভারেই উসমান কাদিরের বলে বিদায় নেন তিনি। জাহিদ ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে ফেরানোর পর বিয়ন ফোরটানকে বোল্ড করেন হাসান।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝেও আগ্রাসী ছিলেন মিলার। ফিফটি করেন তিনি ৩১ বলে। ইনিংসের শেষ ওভারে ফাহিম আশরাফকে মারেন চারটি ছক্কা। ৪৫ বলে ৭ ছক্কা ও ৫ চারে অপরাজিত থাকেন ৮৫ রানে। টি-টোয়েন্টিতে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের এটি তৃতীয় ফিফটি।
১৬৫ রানের টার্গেটের জবাবে ব্যাট করতে নেমে রিজওয়ানের ব্যাটে দারুণ সূচনা পায় পাকিস্তান। সঙ্গ দেন হায়দার আলি। তাদের দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৫১ রান।
নিজের প্রথম বলেই হায়দারকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে স্বস্তিতে এনে দেন তাবরাইজ শামসি। পরে তিনি ফেরান দারুণ ছন্দে থাকা রিজওয়ানকেও।
পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করা কিপার-ব্যাটসম্যান এদিনও খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। তাকে এলবিডব্লিউ করে থামান শামসি। রিজওয়ানের ৩০ বলে ৪২ রানের ইনিংসে ছক্কা দুটি ও চার পাঁচটি। হুসাইন তালাত ও আসিফ আলিকে দ্রুত ফেরান শামসি। ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের সেরা বোলার তিনি।
প্রিটোরিয়াসের বলে বোল্ড হয়ে থামেন বাবর। পাকিস্তান অধিনায়কের ৩০ বলে খেলা ৪৪ রানের ইনিংসে ৫ চার ও এক ছক্কা। ফাহিম ফেরার সময় ৩ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৮ রান।
১০ বলেই সেই রান তুলে ফেলেন হাসান ও নওয়াজ। রান তাড়ায় শেষ দিকে চাপে পড়ে যাওয়া পাকিস্তানকে টানেন হাসান। ৭ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ২০ রানের ইনিংসে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। বল হাতে এই পেসারের প্রাপ্তি ২৯ রানে ২ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৪/৮ (মালান ২৭, হেনড্রিকস ২, স্মাটস ১, ফন বিলিয়োন ১৬, ক্লাসেন ০, মিলার ৮৫*, ফেলুকওয়ায়ো ০, প্রিটোরিয়াস ৯, ফোরটান ১০, সিপামলা ৮*; আফ্রিদি ৪-০-২৮-০, নওয়াজ ২-০-১৩-২, ফাহিম ৩-০-৩৮-০, হাসান ৪-০-২৯-২, জাহিদ ৪-০-৪০-৩, উসমান ৩-০-১২-১)।
পাকিস্তান: ১৮.৪ ওভারে ১৬৯/৬ (রিজওয়ান ৪২, হায়দার ১৫, বাবর ৪৪, তালাত ৫, আসিফ ৭, ফাহিম ১০, নওয়াজ ১৮*, হাসান ২০*; ফোরটান ৪-০-৩০-১, প্রিটোরিয়াস ৩-০-৩৩-১, স্মাটস ৩-০-২০-০, ফেলুকওয়ায়ো ২.৪-০-৩৭-০, সিপামলা ২-০-২৩-০, শামসি ৪-০-২৫-৪)।