কলকাতার বিপক্ষে শেষ ২ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে ম্যাচ জেতালেন রবীন্দ্র জাদেজা।

গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সকল স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এবারের আসরে প্লে-অফে উঠতে হলে গতকালকের ম্যাচে অবশ্যই জয় লাভ করতে হতো কলকাতা নাইট রাইডার্সের। কিন্তু শেষের দুই ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের।

গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্স এর বিপক্ষে ম্যাচ জিততে হলে চেন্নাই সুপার কিংসের প্রয়োজন ছিল ৬ বলে ১০ রান। এমনকি প্রথম চার বলে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের তরুণ ফাস্ট বোলার কামলেশ নাগরকোটি।

কামলেশ নাগরকোটির প্রথম চার বল থেকে মাত্র তিন রান করতে পেরেছিল চেন্নাই সুপার কিংস। ফলে ম্যাচ ঝুঁকে যায় বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামা কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে। কিন্তু শেষ দুই বলে অবিশ্বাস্য কীর্তি দেখান আগের ওভারে ঝড় তোলা রবীন্দ্র জাদেজা।

নাগরকোটির করা পঞ্চম বলটি ছিল লেন্থ ডেলিভারি, সুযোগ হাতছাড়া করেননি জাদেজা, সজোরে হাঁকান ডিপ মিড উইকেটের দিকে, বল গিয়ে আছড়ে পড়ে দুবাই স্টেডিয়ামের ফাঁকা গ্যালারিতে এবং টাই হয়ে যায় ম্যাচ। শেষ বলটি আবারও ছিল লেন্থ ডেলিভারি, এবার ওয়াইড লং অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন জাদেজা।

এই হারেও কলকাতা পয়েন্ট তালিকার পাঁচেই আছে। তবে তাদের প্লে-অফে যাওয়ার আশাটা এতে মারাত্মকভাবে আহত। ১৩ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট কলকাতার। প্লে-অফের জন্য বাকি ম্যাচটিতে ( ১ নভেম্বর) রাজস্থান রয়্যালসকে হারাতে তো হবেই, অন্য সমীকরণগুলোও মিলতে হবে তাদের অনুকূলে।

গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান সংগ্রহ করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৬ উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে চেন্নাই।





১৭৩ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি চেন্নাই সুপার কিংসের। ইনিংসের অষ্টম ওভারে দলীয় ৫০ রানে আউট হওয়ার আগে ১৯ বল ১৪ রান করেন এ অসি তারকা। তবে অন্যপ্রান্তে দুর্দান্ত খেলছিলেন তরুণ ওপেনার রুতুরাজ গাইকোয়ার।

এর মধ্যে দ্বিতীয় উইকেটে তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান আম্বাতি রাইডুকে। দুজন মিলে মাত্র ৩৭ বলে করেন ৬৮ রান। ম্যাচের সমীকরণও চলে আসে চেন্নাইয়ের হাতে। তবে তখনই আবার পাল্টা আঘাত কলকাতার। পরপর দুই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ২০ বলে ৩৮ রান করা রাইডু ও ৪ বলে ১ রান করা অধিনায়ক ধোনি।

রুতুরাজও পারেননি দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে। ইনিংসের ১৮তম ওভারে আউট হন রুতুরাজ। তিন ওভারে জয়ের জন্য ৩৪ রান করতে হতো চেন্নাইকে। সেই ওভারে মাত্র ৪ রানের বিনিময়ের রুতুরাজের উইকেট নেন প্যাট কামিনস। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা রুতুরাজ খেলেছেন ৫৩ বলে ৭২ রানের ইনিংস।

তবে তিনি কাজটা শেষ করতে পারেননি, যা করেছেন জাদেজা। রীতিমতো অবিশ্বাস্য কীর্তিই দেখিয়েছেন জাদেজা। দুই ওভারে বাকি ছিল ৩০ রান, উনিশতম ওভারে আনা হয় দ্রুতগতির পেসার লকি ফার্গুসনকে। কিন্তু তিনি পুরো তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। আসরে আগের ম্যাচগুলোতে নিজের বোলিংয়ের ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি তিনি।

সেই ওভারে একটি করে ওয়াইড-নোবলসহ মোট ৮টি বল করেন ফার্গুসন। সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন জাদেজা। আট বলের ওভারটিতে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে তুলে নেন ২০ রান। যা আবার ম্যাচে ফেরায় চেন্নাইকে। জয়ের জন্য বাকি থাকে আর মাত্র ১০ রান, হাতে ছিল ছয়টি বল।

শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন কামলেশ নাগরকোটি। প্রথম চার বল দুর্দান্ত করলেও শেষ দুই বলে ছক্কা হজম করেন তিনি, যা নিশ্চিত করে দেয় চেন্নাইয়ের জয়। মাত্র ১১ বলে ২ চার ও ৩ ছয়ের মাত্র ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন জাদেজা। অবশ্য এ জয়েও কোনো লাভ হয়নি তাদের। কেননা আগেই বাদ পড়ে গেছে চেন্নাই।





এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা কলকাতা ১৭২ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় মূলত নিতিশ রানার কল্যাণে। বাঁহাতি এই ওপেনার ৬১ বলে খেলেন ৮৭ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ বলে ২৬ রান করেন শুবমান গিল। আর শেষদিকে ১০ বলে ২১ রানের ঝড় তুলেন। যদিও শেষপর্যন্ত এসব গেছে বিফলে।